মঙ্গলবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম ব্যুরো:
মিনি কক্সবাজার খ্যাত চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্রসৈকত। এ সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী সবুজ বেষ্টনী ঝাউবন এখন হুমকির মুখে পড়েছে।টানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া ও ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙছে বালিয়াড়ি। আর সমুদ্রগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের ঝাউবন।
উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, পারকি সৈকতের বালিয়াড়িতে সর্বপ্রথম ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ১২ হেক্টর জায়গায় ঝাউবন গড়ে তোলা হয়। এরপর ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে ১৭.২ হেক্টর, ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৫ হেক্টর ও ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ৫ হেক্টর জায়গায় ঝাউ বাগান সৃজন করা হয়।
চার বারে বালিয়াড়ির মোট ৩৯.২ হেক্টর বা ৯৭ একর জায়গায় লাগানো হয় ঝাউগাছ। এই সবুজ বেষ্টনী পারকি সৈকতের সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকেও রক্ষা করে।
তবে, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ঢেউয়ের ধাক্কায় গেল কয়েক বছর ধরেই বর্ষা মৌসুমে সৈকতের বালিয়াড়িতে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে ঝাউবীথির গোড়ালি থেকে বালু সরে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবনের।
চলতি বর্ষা মৌসুমে সৈকতের অন্তত ৩০০ ঝাউ গাছ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ঝাউবনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারের আদলে গড়ে ওঠা দেশের অন্যতম এ সমুদ্রসৈকতে গত কয়েক বছরে ভাঙনে ও নিধনের শিকার হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ঝাউগাছ। ভাঙন অব্যাহত থাকায় একদিকে সমুদ্র সৈকতটি হারাচ্ছে স্রষ্টা প্রদত্ত সৌন্দর্য অন্যদিকে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে উপকূলীয় মানুষ। পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্যও।
সরেজমিন দেখা গেছে, সৈকতের মূল পয়েন্ট থেকে লুসাই পার্ক পয়েন্ট পর্যন্ত সমুদ্রতীরের প্রায় শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে গেছে। কোনো কোনো গাছ আগেই কেটে নেওয়ায় শুধু গোড়াটিই পড়ে আছে।
এক বছর আগেও যেখানে ঝাউগাছের সারি ছিল, সেখানে ঝাউগাছের চিহ্নও নেই। অনেক গাছের গোড়ালি থেকে বালু সরে যাওয়ায় চিৎকাৎ হয়ে পড়ে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম জানান, সৈকতের ঝাউবন প্রতি বছরের জোয়ারের তোড়ে ভেসে যায়। চলতি বর্ষায় জোয়ারের পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জোয়ারের পানিতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে ঝাউবনের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সৈকতে আটকা পড়া জাহাজ ‘এমভি ক্রিস্টাল গোল্ড’ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে পারকি সৈকতের। কূলে আছড়ে পড়া সাগরের ঢেউ ওই জাহাজে বাধা পাচ্ছে।
ফলে গতি পরিবর্তন হচ্ছে স্রোতের। এ কারণে বালি সরে জমছে পলি, পারকি হারাচ্ছে তার আসল রূপ। দিন দিন সব সৌন্দর্য যেন গিলে খাচ্ছে দানব আকৃতির জাহাজটি। দীর্ঘ তিন বছরের নীরবতা যেন প্রকৃতি ধ্বংসের এক নগ্ন প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
চট্টগ্রাম জেলা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য ও স্থানীয় বারশত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ বলেন, সৈকতে সামুদ্রিক জোয়ারের পানির তোড়ে যে হারে ঝাউগাছ বিলীন হচ্ছে, সেই হারে নতুন বনায়ন হচ্ছে না। তাই সৈকতটির সৌন্দর্য রক্ষার স্বার্থে সৈকতে নতুন করে ঝাউগাছ লাগানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বন্দর বিট কর্মকর্তা মো.হান্নানুজ্জামান বলেন, গত দুই বছরে উপড়ে পড়া ৬১টি ঝাউগাছ নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। সৈকতে উপড়ে পড়া বাকি গাছগুলোর চিহ্নিত করার কাজ চলছে। সৈকতের পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় আপাতত ঝাউ বাগান সৃজনের পরিকল্পনা নেই।
ভয়েস/আআ